রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১
ভূঁইয়া কামাল মুলাদী (বরিশাল)।
বরিশালের মুলাদী উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতে আড়িয়াল খাঁ নদ, জয়ন্তী, ছৈলা ও নয়াভাঙুলি নদীর অস্তিত্ব আজ বিপন্নপ্রায়। প্রতি নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা চরে চাষ হচ্ছে ইরি-বোরো ধানসহ নানা ধরনের ফসল। কৃষকরা অনায়াসে হেঁটেই পার হচ্ছেন নদী।
কৃষিবিদদের মতে, নদীর নাব্যতা হারানোর কারণে শুকনো মৌসুমে ওই এলাকায় কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যা কিংবা অতিবর্ষণে এ অঞ্চলের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বরিশাল সদর উপজেলার কীর্তনখোলা নদীর শেষাংশ থেকে নয়াভাঙুলি নদীর শুরু। বরিশাল সদর, মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদী উপজেলার বুক চিড়ে নয়াভাঙুলি নদী মেঘনায় গিয়ে মিলেছে। নয়াভাঙুলি নদীর তীর ঘেঁষে রয়েছে এক সময়ের বরিশাল জেলার নামকরা ব্যবসা কেন্দ্র মুলাদী বন্দর ও খাশের হাট বন্দর। এখান থেকে বছরে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পেয়ে থাকে। এ ব্যবসা কেন্দ্রের ওপর ভিত্তি করে লাখ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভর করছে। কিন্তু মাঝে মাঝে চর জেগে ওঠার কারণে বড় লঞ্চ তো দূরের কথা ছোট ট্রলারও আটকে পড়ে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অপর দিকে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে।
এক সময় নদীবন্দর বরিশালের সাথে রাজধানী ঢাকার সহজ নৌযোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো আড়িয়াল খাঁ, নয়াভাঙুলি, ছৈলা জয়ন্তী নদী। চলতো পালতোলা নৌকা, স্টিমার, লঞ্চ, কার্গোসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান। কিন্তু কালের বিবর্তনে এসব এখন শুধু স্মৃতি। বড় লঞ্চ, সিস্টাম তো দূরের কথা মাঝারি আকারের লঞ্চ-কার্গোসহ অন্যান্য নৌযানও এখন এ নদী দিয়ে চলাচল করতে পারছে না।
বিচ্ছিন্ন এসব এলাকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষিজাত পণ্য। এ অঞ্চলের বাণিজ্যকেন্দ্রের মধ্যে মুলাদী বন্দর, খাশের হাট, প্যাদার হাট, চরপদ্মার হাট ও শৌলা বাজার অন্যতম। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা অপেক্ষাকৃত কম দামে এ অঞ্চল থেকে ধান পাট, ডাল, তিল, মরিচ, পান ও সুপারিসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য কিনে নৌযান বোঝাই করে অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করতেন। কাঠ বাজারের জন্য মুলাদী বাজারের নাম রয়েছে বরিশাল অঞ্চলসহ সারা দেশে। কিন্তু নয়াভাঙুলি নদীর নাব্যতা না থাকায় এখন আর সেখানে নৌযান আসছে না, পাইকারদেরও পাওয়া যাচ্ছে না। নদীতে পানি না থাকায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। সব মিলিয়ে নদীর নাব্যতা হারানোর এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের আয়ের উৎস সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। নদীর দুই পাশে জেগেছে বিশাল চর। চরের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সরু আকৃতির খাল। অনায়াসেই হেঁটে এ খাল পার হচ্ছে এলাকার ছোট শিশুরা। এ কারণে নদী প্রধান এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নেমে এসেছে বিপর্যয়।
নদীর মধ্যে একাধিক ডুবোচর জেগে ওঠায় ও নদীতে পানি কম থাকায় ঢাকা থেকে মুলাদী আসার বড় লঞ্চগুলো যাত্রি নিয়ে থেমে যায় শৌলা লঞ্চঘাট। সেখান থেকে ভাড়া দিয়ে ট্রলার দিয়ে আসতে হয় যাত্রীদের গন্তব্য স্থলে। আর মুলাদী থেকে ঢাকা যেতে হলে ট্রলারে যাত্রীদের শৌলা গিয়ে লঞ্চে উঠতে হয়। সাথে থাকা মালামাল, শিশু ও নারীদের নিয়ে ট্রলারে প্রায় আট মাইল নদী পথে ট্রলারে গিয়ে লঞ্চে উঠতে ও নামতে ভোগান্তির শেষ থাকে না এবং দশ টাকার মালে খরচ পড়ে বিশ টাকা।
নয়াভাঙুলি নদীর গাছুয়া ইউনিয়নের আকন বাজার রাস্তার মাথা, পৈক্ষা নমরহাট, সুইজ গেট ও কিলেরহাট এলাকার নদী ড্রেজিং করলেই নিরাপদে চালু হতে পারে ঢাকা-মুলাদী নৌ যোগাযোগ। এতে করে সরকারের রাজস্ব খাতে আয় হবে বছরে প্রায় কয়েক কোটি টাকা।